দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা পথ চলে। দ্বীন বিজয়ের মধ্যেই তাদের জীবনের সাফল্য নিহিত। এ বিজয়ের জন্য আন্দোলনের কর্মী হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে বলে তাঁরা বিশ্বাস করে। কারণ, ঈমানদাররা তাদের জান ও মালকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজেদের কাছে রক্ষিত আমানত হিসেবেই জানে। এ জান ও মালকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যয় করার জন্য এগুলোর সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন করা এবং প্রতি মুহূর্তে সে সময় পর্যন্ত উৎকর্ষিত যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা চালানোই তাদের দায়িত্ব।
আল্লাহপ্রদত্ত ও রাসূল সা: প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে চলতে থাকা দ্বীনের কর্মীরা তাই আল্লাহর সব নেয়ামতের সর্বোচ্চ সুন্দর ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। আর সদা গতিশীল জীবনের জন্য সুনির্ধারিত সময় সেসব নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম। এ সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার তাই তাদের কাছে আমানত হিসাবেই গণ্য। জীবনে যে ক’টি মুহূর্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাকেই পরীক্ষার জন্য ইফেক্টিভলি কাজে লাগানোর কাজে সদা ব্যস্ত কর্মীদের উদ্দেশ্যেই এই লেখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সময়ের সদ্ব্যবহার করে জীবনটাকে আল্লাহর রঙে রঙিন করে গড়ে তোলার তৌফিক দেবেন, সেই প্রত্যাশাই আমাদের সকলের।
আলোচনার শিরোনামের মৌলিক টার্মিনোলজিসমূহ প্রথমেই বিশ্লেষণ করে নিতে চাই।
১. ইসলামী আন্দোলনের কর্মী
২. যারা তাদের জীবনটাকে আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে দিয়েছেন।
৩. ব্যবহারিক/দৈনন্দিন জীবন
৪. নিয়মিত জীবন তথা প্রতিদিনের জীবন, সাপ্তাহিক, মাসিক, বার্ষিক, গোটা জীবন।
৫. ‘সুষ্ঠু পরিচালনা’
৬. যেভাবে জীবন পরিচালনা করলে জীবন সার্থক ও সাফল্যমন্ডিত হয়ে উঠবে।
৭. ‘সময় ব্যবস্থাপনা’
৬. সময়কে ইফেকটিভলি কাজে লাগানোর পদ্ধতি।
আমাদের ব্যবহারিক জীবন তথা জীবন কিভাবে পরিচালনা করা হবে?
সেটা জানার আগে, আমাদের জীবন পরিচালনার টার্গেট কী- এটা আগে জানতে হবে। কারণ উদ্দেশ্যের ওপরই নির্ভর করে কাজের সার্থকতা কাজ বা নিরর্থকতা। যেমন একজন ক্রিকেটার দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করলে তার সময় কাজে লাগল হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু ফুটবলার তার ফুটবল খেলা প্র্যাকটিস না করে শুধু ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে থাকলে তার সময় অপচয় হয়েছে বলে ধরা হয়।
মানুষের জীবন পরিচালনার মৌলিক উদ্দেশ্য কী?
১. শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যের ব্যাপারে কুরআনে উল্লেখ করেছেন, “ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়া’বুদুন।”
২. আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করা। আল্লাহ বলেন, “ইন্নি জায়িলুন ফিল আরদ্বি খালিফাহ।” খেলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় পাওয়া যাবে। এই সময়টুকুতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছি কি না, সেটার প্রেক্ষিতেই বিচার হবে পরকালে।
৩. আমাদের টার্গেট হচ্ছে দ্বীনকে বিজয়ী করা। আল্লাহ বলেন, “হুওয়াল্লাযি আরসালা রাসূলাহু বিল হুদা ওয়া দীনিল হাক্কি লিইউজহিরাহূ আলাদ্বীনি কুল্লিহি ওয়ালাও কারিহাল মুশরিকিন।” রাসূল সা:-এর উম্মত হিসাবে রাসূল সা: এর রেখে যাওয়া এ কাজ আমাদেরকেও করতে হবে।
৪. ঈমানদার হিসেবে আমরা আমাদের জান-মাল সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছি আল্লাহর কাছে। তাই, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জান-মাল তথা সকল কিছু ব্যয় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ইন্নাল্লহাশতারা মিনাল মু’মিনিনা আনফুসাহুম ওয়া আমওয়ালাহুম বিয়ান্না লাহুমুল জান্নাহ।”
৫. দ্বীন বিজয়ের কার্যক্রম আমাদেরকে সে পদ্ধতিতেই করতে হবে, যে পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ সা: করে গেছেন। তাঁর পদ্ধতি ও দর্শন মেনেই আমাদেরকে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে সে কার্যক্রমের নামই হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।
৬. ইসলামী আন্দোলনের সংজ্ঞা: আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক সংঘবদ্ধভাবে সুনির্ধারিত প্রক্রিয়ায় প্রচেষ্টা চালানোর নাম হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন।
৭. ইসলামী সংগঠন : যে সংগঠন ইসলামী আন্দোলন পরিচালনা করে তাকেই ইসলামী সংগঠন বলে।
৮. অতএব আমাদের জীবন পরিচালনার লক্ষ্য হচ্ছে দ্বীন বিজয়ের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।
৯. এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজেদেরকে সংগঠনের অধীনে এনে আমরা একতাবদ্ধ করেছি। অর্থাৎ আমরা ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য ইসলামী সংগঠনে এসে যুক্ত হয়েছি। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই গোটা সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কাজ করা হয়ে থাকে।
১০. সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হতে আমরা আমাদের কাজ খুঁজে পেতে পারি।
“আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা: প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।” সংক্ষেপে বললে, আমরা প্রকৃতপক্ষে ইসলাম অনুসারে মানুষের জীবনকে ঢেলে সাজানোর মধ্য দিয়ে আল্লাহকে খুশি করতে চাই। এখানে ‘মানুষ’ বলতে ব্যক্তি মানুষ থেকে শুরু করে ব্যক্তির সমষ্টি পরিবার, পরিবারের সমষ্টি সমাজ, সমাজের সমষ্টি রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের সমষ্টি গোটা মানব সভ্যতাকে বোঝায়। এই গোটা মানবসভ্যতাকে আমরা ইসলাম অনুসারে ঢেলে সাজাতে পারলে গোটা পৃথিবীই সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন হবে এভাবে- আল্লাহর রঙে জীবনকে রাঙানো, প্রত্যেককে দ্বীন বিজয়ের দক্ষ কারিগর রূপে গড়ে ওঠা।
দ্বীন বিজয়ের দক্ষ কারিগর হতে হলে কী কী যোগ্যতা অর্জন করতে হবে আমাদেরকে?
ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেকটি কর্মীকে নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো অর্জন করার মাধ্যমে দ্বীন বিজয়ের দক্ষ কারিগর রূপে গড়ে উঠতে হবে।
ঈমান: পরিপূর্ণ ঈমান অর্জন করতে হবে। ঈমানের যত দিক আছে, তার সবগুলোর প্রতি যথাযথভাবে বিশ্বাস পোষণ করতে হবে। এমন ঈমান অর্জন করতে হবে, যেন আমরা ঈমানের হকসমূহ ঘোষণা করতে পারি দিলে, মুখে এবং কাজে প্রয়োগ করার মাধ্যমে।
ইলম: কুরআন ও হাদিস তথা ইসলামের পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এমন জ্ঞান হবে, যাতে জীবনের প্রতিটি বাঁকে ইসলামের সলিউশন খুঁজে বের করা যায়। এমন জ্ঞান, যেন সমাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সেক্টরের ইসলামী রূপরেখা তৈরি করা যায়।
আমল: আল্লাহর কাছে নিজেকে পূর্ণরূপে সঁপে দেয়ার মধ্য দিয়ে ইসলাম আমাদের কাছে যেমন আমল প্রত্যাশা করে ঠিক সে রকম আমলের অধিকারী হতে হবে। তাহলে আমাদের চরিত্র হয়ে উঠবে ইসলামের মূর্ত প্রতীক হিসাবে; আমরা হবো ইসলামের বাস্তব সাক্ষী। আমলিয়াতকে সুন্দরতম করার মধ্য দিয়ে তাকওয়াবান ও মুহসিনের পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে আমাদেরকে।
ত্বাকওয়া: আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে আল্লাহর বিধি-নিষেধ যথাযথভাবে পরিপালন করে চলার নাম হচ্ছে তাকওয়া। আমাদেরকে পরিপূর্ণ তাকওয়ার অধিকারী হতে হবে।
ইহসান: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরিপূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে আল্লাহর হুকুম মেনে চলা এবং আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর দ্বীনকে সর্বক্ষেত্রে যথাযথ মর্যাদার সাথে বুলন্দ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার নাম হচ্ছে ইহসান। আমাদেরকে ফাইনালি এ ইহসানের অধিকারী হতে হবে তথা আমাদেরকে মুহসিন হতে হবে। ক্রমান্বয়ে আমাদেরকে ঈমানী শক্তিকে বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে যথাযথ আমলদার তথা শক্তিশালী মুসলিম হতে হবে এবং আমলের সর্বোচ্চ পর্যায় তথা ইহসানের পর্যায়ে পৌঁছতে হবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ইবাদাতের মধ্যে দু’টি দিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হতে পারে।
আনুষ্ঠানিক বন্দেগি: আনুষ্ঠানিক ইবাদত বলতে বিশেষভাবে হাক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর হক্কের সাথে সম্পর্কিত ইবাদতগুলোকে বুঝাচ্ছি। ইসলামের পক্ষ থেকে যেসব আনুষ্ঠানিক ইবাদতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেসব বন্দেগি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মুয়ামেলাত: আমলিয়াতের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে আচার আচরণ তথা মুয়ামেলাত যা বিশেষভাবে হাক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক্কের সাথে সম্পর্কিত। এ মুয়ামেলাত বিভিন্ন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির সাথে সম্পর্কিত।
যেমন-
১. ব্যক্তিগত
২. পারিবারিক ও আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্কিত
৩. সাংগঠনিক
৪. সামাজিক
৫. প্রাতিষ্ঠানিক প্রভৃতি
উপরিউক্ত সকল ক্ষেত্রের জন্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ম বিধান দেয়া হয়েছে। সেসব নিয়ম বিধান যথাযথভাবে মেনেই আমাদেরকে মুয়ামেলাত নিশ্চিত করতে হবে।
জাগতিক শক্তি: উপর্যুক্ত যোগ্যতার পাশাপাশি দ্বীন বিজয়ের দক্ষ কারিগরদের জন্য দুনিয়া পরিচালনার কৌশল ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এবং এসব দক্ষতাকে ইসলামের আলোকে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ আমাদেরকে জাগতিক উপায় উপকরণ ব্যবহার করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আর সেটারই অপর নাম ক্যারিয়ার হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। কারণ শৈশব ও কৈশোরে অর্জিত যোগ্যতার উপর ভিত্তি করেই মূলত মানুষ পরিণত বয়সের কাজের ক্ষেত্র নির্ধারণ করে থাকে। আর পরিণত বয়সের কাজের ক্ষেত্রকেই মূলত আমরা ক্যারিয়ার আখ্যা দিয়ে থাকি। সাধারণ মানুষ এ ক্যারিয়ারকে আয় উপার্জনের মুখ্য হাতিয়ার হিসাবে নিলেও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা ক্যারিয়ারকে দ্বীন বিজয়ের হাতিয়ার হিসাবে নেবে সেটাই ঈমানের স্বাভাবিক দাবি। হালাল রুজিও ক্যারিয়ারের আরেকটা লক্ষ্য হতে পারে, তবে সেটা দ্বীন বিজয়ের মুখ্য উদ্দেশ্যের পাশাপাশি অবস্থান করবে, স্বতন্ত্রভাবে নয়। আমার মতে স্বাভাবিক ও যৌক্তিক পন্থায় যেকোন সেক্টরের নেতৃত্বে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সুন্দরতম দক্ষতা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারলেই নেতৃত্বে যাওয়া সম্ভব হবে।
মৌলিক মানবীয় চরিত্র: এটি মূলত মানুষের নৈতিক চরিত্রের পরিপূরক। নীতিগত যেসব গুণাবলি সমাজের মধ্যে মানুষের নেতৃত্বের জন্য ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হয় সেগুলোকেই মৌলিক মানবীয় চরিত্ররূপে বিবেচনা করা চলে। এসব দিক থেকে আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
সাংগঠনিক দক্ষতা
দায়ী: ইসলামের পথে মানুষকে যথাযথভাবে ডাকতে পারার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এ দাওয়াত মৌখিকভাবেও হবে, লিখনির মাধ্যমেও হবে আবার বাস্তব চরিত্রের মাধ্যমেও হবে।
সংগঠক: ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে অংশ নিতে ইচ্ছা পোষণকারীদেরকে আন্দোলনে যুক্ত করা এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে সংগঠন পরিচালনার যোগ্যতাও আমাদের কর্মীদের অর্জন করতে হবে।
প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষক: আমরা আমাদের কর্মীদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিতে চাই, যেন তাঁরা ইসলামী ইলমের দিক থেকে এবং ইসলামী চরিত্রের দিক থেকে জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। তাই আমাদেরকে সেভাবে প্রশিক্ষিত হতে হবে আবার আমাদেরকেই সেভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার যোগ্যতাও অর্জন করতে হবে।
ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও প্রয়োগের জন্য অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এবং ছাত্রদের সমস্যা দেখলে হৃদয় কাঁপতে হবে, আন্তরিকভাবে কষ্ট পেতে হবে। তাহলেই ছাত্রদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার প্রবণতা তৈরি হবে। একই সাথে ছাত্রসমস্যার সমাধানে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ছাত্রসমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা: অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জসমূহ ভালোভাবে বুঝা, সচেতন হওয়া এবং ওয়েল ইনফর্মড থাকা আমাদের জন্য জরুরি। এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৌশল রপ্ত করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং ফাইনালি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের যাবতীয় বিষয়ে সূক্ষ্ম ধারণা অর্জন এবং তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে আমাদেরকে।
উপর্যুক্ত যোগ্যতাগুলো ইনডিভিজ্যুয়াল ব্যক্তির জন্য অর্জিত হতে পারে। তবে এতটুকুই যথেষ্ট হবে না। দ্বীন বিজয়ের দক্ষ কারিগর সত্যিকারার্থে দক্ষ কারিগর হিসেবে ভূমিকা পালনের জন্য সংঘবদ্ধভাবে কাজ করার যোগ্যতাও অর্জন করতে হবে এবং কাজ করতে হবে। উপর্যুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে একসুতোয় গেঁথে মালা বানাতে হবে। যেমন, একটি বিল্ডিং বানানোর জন্য যদি দশজন মিস্ত্রি লাগে, তাহলে তারা নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে যদি পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে যার যার দায়িত্ব পালন করেন, তবেই কেবল বিল্ডিং তৈরি করা সম্ভব হয়ে উঠবে, নচেৎ নয়।
আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই। একটি গাড়ি চলতে গেলে বেশ কয়েকটি চাকা লাগে। চাকার জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে, যদি চাকা গাড়িকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে যথাযথভাবে সহযোগিতা করতে পারে। নচেৎ চাকার জীবন সার্থক হবে না। যদি চাকাটি ত্রুটিপূর্ণ হয় তবে সে গাড়িকে গন্তব্যে পৌঁছতে যথাযথভাবে সহযোগিতা করতে পারবে না। আবার চাকা যদি ত্রুটিমুক্ত এবং যথাযথ হয় তাহলেও তা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে না যদি না তাকে গাড়ির সাথে যথাযথভাবে নাট বোল্ট দিয়ে লাগানো হয়। আবার শুধু নাট বোল্ট লাগালেই হবে না বরং শক্তভাবে লাগাতে হবে, নইলে মধ্যপথে গিয়ে গাড়ি এক্সিডেন্টের শিকার হতে পারে।
তাই, চাকার জীবনের উদ্দেশ্য সফল ও সার্থক হতে হলে চাকার গঠন যথাযথ হতে হবে এবং গাড়ির সাথে শক্ত করে লাগাতেও হবে। এমনটি করা গেলে, এবং গাড়িকে চলতে চাকার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিলে তবেই কেবল চাকার জীবনের উদ্দেশ্য সফল হতে পারে। ঠিক তেমনই আমাদের প্রত্যেককে উপরোল্লিখিত গুণাগুণগুলো যথাযথভাবে সর্বোচ্চ পরিমাণে অর্জন করতে এবং ইসলামী আন্দোলনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নিজেদেরকে সংগঠনের সাথে শক্তভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় আবদ্ধ করতে হবে। তাহলেই আমাদের জীবন সার্থক হয়ে উঠতে পারে।
উপরে উল্লিখিত যোগ্যতা অর্জনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি বর্তমান জীবন পরিচালনার জন্যও আমাদেরকে অবশ্যই হালাল রুজি অর্জনের প্রচেষ্টার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতেই হয়। তবে ছাত্র হওয়ায় এবং আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকের নিকট থেকে টাকা আসায় আমাদেরকে এ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমাদেরকে বেইসিক্যালি উপরোল্লিখিত যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রতিদিন সময় ব্যয় করতে হয়। কিছু জনের জন্য কিছু কিছু এক্সেপশনাল থাকতে পারে, কিন্তু সাধারণভাবে সবার জন্য এমনটাই সত্য।
মনে রাখা দরকার, আমাদের সবার যোগ্যতার সামষ্টিক রূপের মধ্য দিয়েই প্রকৃতপক্ষে সংগঠনের যোগ্যতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অন্যভাবে বললে, সংগঠনের যোগ্যতার বিরাট একটি অংশ নির্ভর করে এর কর্মীদের যোগ্যতার উপর। তাই, সংগঠনের উদ্দেশ্য সফল করা তথা ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন করার প্রচেষ্টা চালানো আমাদের কর্তব্য। সেসব যোগ্যতা অর্জনের জন্য কিভাবে কাজ করতে হবে? এক্ষেত্রে ব্যবহারিক জীবনের কার্যকারিতা কতটুকু? আবার ব্যবহারিক জীবন বলতেই বা কি বুঝায়?
১. যতটুকু জীবন আছে, শেষ পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে; আমরা জানি না আমাদের মৃত্যু কখন হবে। অতএব, প্রতিটি ক্ষণকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করাটা হচ্ছে আমাদের জন্য পরীক্ষার বিষয়।
২. উপরোল্লিখিত যোগ্যতা একদিনে হয়ে উঠবে না। প্রতিদিনের চর্চার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠতে হবে।
৩. জীবনের সবগুলো দিকই গড়ে তুলতে হবে অভীষ্ট লক্ষ্যে। ফধরষু ষরভব-এ তাই প্রতিটি কাজকেই সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে। সে জন্যই ব্যালান্সড লাইফ লিড করতে হবে।
সময় কী?
সময় হচ্ছে একটি পরিমাপ মাত্রা যা দ্বারা বিভিন্ন কার্যক্রমকে অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের দিকে সাজানো যায় (অর্থাৎ কোন কাজ আগে হয়েছে, কোনটা পরে হয়েছে তা উল্লেখ করা যায়) এবং একটি কাজ কতক্ষণ ধরে হয়েছে তা মাপা যায় এবং দুইটি কাজের মধ্যে কতক্ষণ পার্থক্য ছিল তাও মাপা যায়।
সময়ের নেচার/ প্রকৃতি?
বিখ্যাত দার্শনিক আশরাফ আলী থানবী (রহ) বলেন, কাল বলতে আমরা মাত্র তিনটি দিনই বুঝি। গতকাল, আজ ও আগামীকাল। কিন্তু আজ বলতে আমাদের নিকট কিছু আছে কি? এ তো অতীত ও ভবিষ্যতের সংযোগস্থল, যার কোন স্থায়িত্ব নেই। এর গতি এত দ্রুত যে, একে মোটেও আয়ত্তে রাখা যায় না। অতীতকাল তো পূর্ব থেকেই হাত ছাড়া, আর ভবিষ্যতের কোন নিশ্চয়তা নেই। অতএব, মানুষ কিভাবে কাজ করবে? তাকে যে জীবনে অনেক বড় হতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে শত সহস্র বাধা-বিঘœ পেরিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্য পানে। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো অত্যাবশ্যক।
আল্লামা সুয়ুতি রহ: ‘জামউল জাওয়ামে’ নামক গ্রন্থে একটি হাাদস উল্লেখ করেছেন, রাসূল (সা) এরশাদ করেন, “প্রতিনিয়ত সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘দিন’ এই বলে ঘোষণা করতে থাকে যে, যদি কেউ কোন ভাল কাজ করতে চায়, তাহলে যেন সে তা করে নেয়। কেননা আমি কিন্তু আর ফিরে আসবো না। আমি ধনী-দরিদ্র, ফকির-মিসকিন, রাজা-প্রজা সকলের জন্য সমান। আমি বড় নিষ্ঠুর। আমি কারো প্রতি সদয় ব্যবহার করতে শিখিনি। তবে আমার সঙ্গে যে সদ্ব্যবহার করবে সে কখনও বঞ্চিত হবে না।” সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না- এ প্রবাদ বাক্যের সাথে আমরা সবাই পরিচিত।
সময় হচ্ছে অমূল্য সম্পদ: সময়ের সদ্ব্যবহারের নির্দেশনা কুরআন হাদিসে নানাভাবে এসেছে। সেগুলো থেকে ভারসাম্যপূর্ণ দৈনন্দিন জীবন পরিচালনায় সময়ের ব্যবহারের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। “কালের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে, তারা ছাড়া যারা ঈমানদার, সৎ কর্মশীল, পরস্পরকে সত্যনিষ্ঠার নির্দেশ প্রদানকারী এবং ধৈর্য ধারণকারী ও অবিচল।” (আল কুরআন, সূরা আসর, আয়াত ১-৩) আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল।” (সূরা ফাতির : ৩৭)
রাসূল (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা যাকে দীর্ঘায়ু করেছেন, এমনকি তাকে ষাট বছরে পৌঁছিয়েছেন তার ওজর পেশ করার সুযোগ রাখেননি।”
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূল সা: বলেছেন, “মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন দিবসে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। তার জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কিভাবে তা ব্যয় হয়েছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে বলা হবে, কেমন করে সে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে? সম্পদের বিষয়ে প্রশ্ন হবে, এই সম্পদ সে অর্জন করল কোত্থেকে? আর কিভাবেই বা তা খরচ করেছে? তার যে জ্ঞান ছিল, তা দিয়ে সে কী করেছে?” এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, সময়ের প্রেক্ষিতে যৌবনকাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অন্য এক হাদিসে এরশাদ হচ্ছে, “পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি বস্তুকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। (১) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে (২) বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে (৩) অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে (৪) দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে এবং (৫) ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে।”
সময়ের সদ্ব্যবহার বলতে কী বুঝি?
দায়িত্বের সবটুকু কাজ সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করার জন্য লিমিটেড টাইমের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারার নাম হলো সময়ের সদ্ব্যবহার। ন্যূনতম সময় ব্যবহার করে সর্বোচ্চ আউটপুট নিশ্চিত করা। চৎড়ঢ়বৎ ঁঃরষরুধঃরড়হ ড়ভ ঃরসব.
সময়ের সদ্ব্যাবহার বা সময় ব্যবস্থাপনার পন্থা ও কৌশল:
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আশা করা যায় সময় ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো নিজে নিজেই নিরূপণ করে নেয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। সময় ব্যবস্থাপনার প্রথম থিওরি হচ্ছে, সময়কে ব্যবস্থাপনা করা যায় না। কারণ, এটি তার জন্য নির্ধারিত নিয়মে বয়ে চলছে; এর গতির ওপর মানুষের কোন হাত নেই। তাই বলা যেতে পারে, অর্থাৎ আপনি সময়কে ব্যবস্থাপনা করতে পারেন না; তাই সময় অনুসারে আপনার নিজেকেই ব্যবস্থাপিত হয়ে যেতে হবে। এ আলোচনাতে তাই ‘সময় ব্যবস্থাপনা’ বলতে সময়ের প্রেক্ষিতে নিজেকে ব্যবস্থাপনাই বুঝাবো।
কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে সময়ের মূল্যায়ন করা হয়। যেমন হাদিসে বিভিন্ন আমলের কারণে হায়াত বৃদ্ধির কথা বলা আছে। সেক্ষেত্রে হায়াত বৃদ্ধির বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা হতে পারে। তন্মদ্ধে হতে পারে হায়াত বৃদ্ধি মানে জীবনের দিন সংখ্যা বৃদ্ধি। আবার হতে পারে, হায়াত বৃদ্ধি মানে নির্দিষ্ট সময়েই অধিক নেক কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি।
সময় ব্যবস্থাপনার মৌলিক টার্গেট হচ্ছে এফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি। আমরা জানি, (কাজ বা আউটপুট)/সময় = এফিসিয়েন্সি। অতএব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি করতে চাইলে কাজ বেশি করতে হবে অথবা নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে এফিসিয়েন্সি বাড়াতে চাইলে কম সময়ে কাজটি শেষ করতে হবে। সংগঠনের ক্ষেত্রে সুন্দর সিস্টেম দ্বার করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে এফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি হতে পারে। সময়ের এক ফোর, অসময়ের দশ ফোর। সময় ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নিজের জন্য নির্ধারিত সবগুলো কাজ যথাযথভাবে যথাসময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা।
কন্টিনিউয়িটি ঠিক রাখা। দায়িত্বশীলদের উচিত তার জন্য নির্ধারিত সময়ে এমনভাবে কাজ করা যেন সেই কাজ টেকশই হয় এবং তার পরবর্তী দায়িত্বশীল এসে যেন তার কাজেরই কন্টিনিউয়েশন করে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বললে, আপনি যদি আপনার দায়িত্বের সময় দশ সিঁড়ি হাঁটেন, তবে পরের দায়িত্বশীল এসে যেন এগারতম সিঁড়ি থেকে হাঁটা শুরু করতে পারেন। তাকে যেন প্রথম সিঁড়ি থেকে হাঁটা না শুরু করতে হয়। তিনি যদি ১১তম সিঁড়ি থেকে হাঁটতে পারেন, তাহলে দুইজনের দায়িত্বের মোট সময়ের প্রেক্ষিতে এফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি পাবে। সময় ব্যবস্থাপনার মূল টার্গেট হচ্ছে আউটপুট সুনিশ্চিত করা।
সময় ব্যবস্থাপনা বলতে ব্যক্তির সময়কে কাজে লাগানো এবং সংগঠনের জন্য মোট সময়কে কাজে লাগানোও বুঝাবে। যেমন, একজন ভাই নিজের আরেকটি কাজ শেষ করে পাঁচজনের সামষ্টিক প্রোগ্রামে দেরি করে এলেন। তার কারণে প্রোগ্রাম তিন মিনিট দেরি করে শুরু হলো। এতে আসলে দেরি করে আসা ভাইটির হয়ত ব্যক্তিগতভাবে সময় লস হলো না কিন্তু সামষ্টিকভাবে অপর চারজনের প্রত্যেকের জন্য তিন মিনিট করে মোট ১২ মিনিট সময় নষ্ট হলো, যা সংগঠনের মোট সময়ের প্রেক্ষিতে এফিসিয়েন্সি লস হিসেবে গণ্য হবে। তাই অন্যের সময়ের সদ্ব্যবহারের দিকেও প্রত্যেককে খেয়াল রাখতে হবে।
মৃত্যুর আগ পর্যন্তই পরীক্ষার সময়, মৃত্যুর পরে আর সুযোগ পাওয়া যাবে না। আর মৃত্যুর সময় আমরা জানি না। তাই, বর্তমান সময়কে কাজে লাগানো হচ্ছে পরীক্ষার অংশ। ভবিষ্যৎ সময়কে সুযোগ মনে করাই শ্রেয়।
সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল: সময় ব্যবস্থাপনার জন্য অনেক কৌশল থাকতে পারে। তবে কিছু মৌলিক কৌশল এখানে উল্লেখ করা হলো।
১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুণ বা সময়ের ব্যবহারকে আত্মসমালোচনার মধ্যে আনুন। (ডায়েরি ও রিপোর্ট রাখা এবং আত্মসমালোচনা করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।)
রাসূল সা: বলেছেন, “ধ্বংস তার জন্য, যার আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে উত্তম হলো না।” (আল-হাদিস)
রাসূল সা: পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের ওপর অগ্রাধিকার বা গুরুত্ব দেয়ার জন্য বলেছেন, “বৃদ্ধকাল আসার আগে যৌবনের, অসুস্থতার আগে সুস্থতার, দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার, ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে অবসরের ও মৃত্যু আসার আগে জীবনের।” হাদিসখানা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সময় বিশ্লেষণে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। পরিকল্পনা, সম্ভাব্যতা, পারিপার্শ্বিকতা ও প্রতিটি কাজের জন্য বিশ্লেষণমূলক সঠিক সময় নির্ধারণ ও বিন্যস্তকরণ ইসলামের দাবি।
নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন। কুরআন বলছে, “সেই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা বাজে কাজ থেকে বিরত থেকেছে।” (সূরা মুমিনুন : ১ ও ৩) আর এটা করতে পারলে আমাদের কাজের পরিমাণ কমে যাবে, অর্থাৎ আমরা প্রতিটি কাজের জন্য বেশি সময় বরাদ্দ পাব এবং কাজগুলোকে সুন্দরভাবে করার সুযোগ পাব। সূরা ফুরকানে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে বলা হয়েছে, “যখন তারা এমন কোনো জায়গা দিয়ে পথ চলে যেখানে বাজে কথা ও কাজের মহড়া চলে, তখন তারা ভদ্রভাবে জায়গা অতিক্রম করে চলে যায়।”
মুমিনের আল্টিমেট অবসর সময় বলতে কিছু নেই। বরং একটু অবসর সময় যদি চলে আসেও, তখনও আল্লাহ কাজ দিয়ে দিচ্ছেন। “কাজেই যখনই অবসর পাও, ইবাদাতের কঠোর শ্রমে লেগে যাও এবং নিজের রবের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করো।” (সূরা আলাম নাশরাহ : ৭-৮)
আবু মুসা আশাআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একাধিকবার বলতে শুনেছি।
“কোন মানুষ যখন সৎকর্ম করতে থাকে, পরে তাকে রোগ-ব্যাধি পেয়ে বসে অথবা সফর অবস্থায় থাকে, তখন তার কর্মবিবরণীতে সে আমলগুলো লেখা হতে থাকে, যেগুলো সে সুস্থ ও গৃহে থাকাবস্থায় করে আসছিল।” (বুখারি, জিহাদ অধ্যায়) অর্থাৎ আমরা যদি জীবনটাকে ভালো আমলসম্পন্ন রুটিনে গড়ে তুলতে পারি, তবে সেটা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তির। দৈনন্দিন মানোন্নয়নের কাজগুলোকে রুটিনের আওতায় নিয়ে আসা। যেমন পার্সোনাল রিপোর্টের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো। টেবিল ওয়ার্কে অভ্যস্ত হওয়া। আগের দিনই কার্যসূচি ঠিক করে নেয়া। রাতে বসে ঐদিনের জন্য নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়নের আত্মপর্যালোচনা করা।
কাজ হওয়া উচিত পরিকল্পনার আলোকে। অপরিকল্পিত কাজ এভোয়েড করা উচিত। পরিকল্পনাকে দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি আকারে ভাগ করে নেয়া উচিত। বার্ষিক, মাসিক, দৈনিক ও ঘণ্টাসহ বিভিন্ন মেয়াদে বিন্যাস করে নেয়াও সময়ের অপরিহার্য দাবি। কাজ শুরু করার আগে উদ্দেশ্য ভালোভাবে বুঝে নেয়া দরকার। তাহলে, এফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি পাবে। সাময়িক লাভজনক কিন্তু ভবিষ্যৎ অকল্যাণকর এমন কর্মসম্পাদন করা উচিত নয়। সেগুলোর জন্য আল্টিমেটলি সময় অপচয় হয়ে যায়। যেকোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়ে শিখে নেয়ার চেষ্টা করা জরুরি। কারণ, শেখার জন্য সময় তো ব্যয় করেই ফেললেন, কিন্তু শিখতে না পারলে সেক্ষেত্রে হিডেন সময় অপচয় হয়ে গেল।
ফাইলপত্রসহ সবকিছুর সঠিক আর্কাইভিং করা উচিত, তা কম্পিউটারে হোক আর হার্ড কপিতে হোক। তাহলে, সহজে যেকোন প্রয়োজনে ডকুমেন্ট খুঁজে পাওয়া যাবে। সময় বাঁচবে। সব মিলিয়ে গোছালো হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। সাস্টেইনেবিলিটি নিশ্চিত করে কাজ করা। যে কাজই করছেন না কেন, সেটা যেন পরবর্তী দায়িত্বশীলের কাছে সহজে সম্পূর্ণভাবে হ্যান্ডওভার করা যায়, সে ব্যবস্থা করে করে কাজ উচিত। তাহলে, আন্দোলনের সময় অপচয় থেকে বাঁচানো যাবে। আপনি ৬ সিড়ি হাঁটলে যেন পরের দায়িত্বশীল এসে ৭ নং ধাপ থেকে এগোতে পারেন। বড় কাজকে ছোট ছোট পার্টে ভাগ করে ফেলুন। ম্যানিং শিডিউল এবং টাইম শিডিউল ঠিক করে কাজ বাস্তবায়ন করুন। তাহলে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সহজ হবে।
ওয়েটিং টাইমকে সেখানকার জন্য সুইটেবল কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। যেমন ওয়েটিং টাইমে সাহিত্য পড়া, চিন্তা করা, ফোনিং শেষ করে ফেলা প্রভৃতি। ছুটির দিন বা অবসরের দিনকে কাজে লাগান। কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখা যেতে পারে। নিজের জন্য উদ্দিষ্ট কাজে নিজেকে নিজে লকড করে ফেলুন। যেমন অ্যাকাডেমিক পড়া পড়ার জন্য চেয়ারের সাথে অদৃশ্য রশি দিয়ে নিজেকে বেঁধে ফেলা যেতে পারে। প্রয়োজনে লাইব্রেরিতে যাওয়া। সময়ের বেস্ট ইউটিলাইজেশনের জন্য কাজের সিরিয়াল করে নেয়া। যেমন, একই পথে যেটার পরে যেটা করে শেষ করা যায়, সেটা করে করে এগোনো যায়। সাপোজ, চাকরির অ্যাপ্লাই করার জন্য ব্যাংক ড্রাফট, ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি ওয়াশ, সত্যায়ন করা প্রভৃতি কাজ কোনটার পরে কোনটা করা হবে সেটার সিরিয়াল করে নিলে কম সময়ে বেশি কাজ করা যাবে।
যেকোন কাজে যাওয়ার আগে সেটার সাথে সম্পর্কিত যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যাওয়া উচিত। এটি স্মার্টনেসের পরিচয়ও বহন করে। তাড়াতাড়ি করুন, কিন্তু তাড়াহুড়া করবেন না। তাড়াতাড়ি মানে হচ্ছে কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে অযথা সময় ক্ষেপণ না করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে দ্রুত কাজ শেষ করা। আর তাড়াহুড়া মানে হচ্ছে, যৌক্তিকতার ঊর্ধ্বে উঠে দ্রুত কাজ করা। অর্থাৎ যে কাজ যথাযথভাবে করতে সর্বনিম্ন ৫ মিনিট লাগবে, তা তার চেয়েও দ্রুত করার চেষ্টা করা।
গুরুত্বের বিবেচনায় কাজের প্রাইয়োরিটি লিস্ট করা। ক্যাপাসিটির আলোকে ইম্পর্ট্যান্ট কাজগুলো সিরিয়ালি শেষ করা দরকার। ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি কাজ জমে যেতে পারে; যেগুলো হয়ে উঠছে না। সেক্ষেত্রে কাজগুলোর লিস্ট করে তারপর একটা একটা করে শেষ করে নেয়া দরকার।
একান্তই ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত কেউ কাজ দিলে শুধু শুধু না পারা বা না করার চেয়ে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে ‘না’ বলাও শিখতে হবে। তবে, এখানে অবশ্যই ফাঁকি দেয়ার মানসিকতা থাকা যাবে না। এটা নিজের কাছে আমানত হিসেবে মনে করতে হবে। উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে, এমন কেউ কাজ দিলেন, যাকে না করা উচিত নয়, সেক্ষেত্রে তার কাজটিকে সিরিয়ালে আগে এনে লেস ইম্পর্ট্যান্ট কাজকে পরে পাঠিয়ে দেয়া যেতে পারে।
কন্টিনিউটি জরুরি। সেটার জন্য সুস্থ জীবন যাপন জরুরি। নইলে কয়েকদিন অতিরিক্ত কাজ করার পরে অসুস্থ হয়ে গিয়ে পরের কিছুদিন একেবেরাই কম কাজ হলে আল্টিমেটলি কোন লাভ হলো না। তাই, নিয়মতান্ত্রিক থাকা বা রুটিন মাফিক চলতে পারলে ভালো। যেমনÑ খাওয়া, গোসল, ঘুম, ব্যায়াম প্রভৃতি ঠিকমত করা উচিত। কাজের কোয়ালিটি নিশ্চিত করা জরুরি। আবার কোয়ান্টিটিও নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু কোয়ান্টিটি নিশ্চিত করতে গিয়ে কোয়ালিটিতে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। ক্যাপাসিটি লিমিটেড থাকলে একটা একটা করে কাজ করে শেষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পূর্ণ মনোযোগ জরুরি। আবার ক্যাপাসিটি বাড়লে একসাথে কয়েকটি কাজ করা যায়, তবে কোয়ালিটি এনশিউর করাটা চ্যালেঞ্জিং। কিছুক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিখুঁত করতে গিয়ে অযথা সময় ব্যয় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আন ইম্পর্ট্যান্ট ডিটেইলিং এভোয়েড করা যেতে পারে সময়ের স্বার্থে।
নেট ইউজ, খেলাধুলা প্রভৃতি উদ্দেশ্যের আলোকে সময় নির্ধারণ করে শুরু করা উচিত। নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে এন্ড টেনে দেয়া উচিত। অনির্ধারিত সময় নিয়ে শুরু করা বা চলতে থাকা উচিত নয়। নেট ইউজের ক্ষেত্রে অ্যাসাইনমেন্ট ফিক্স করে অনলাইনে ঢুকলে ভালো হয়। শুরু করতে হবে সকাল সকাল। তাহলে দিনটা বড় পাওয়া যাবে। সব কাজ একা না করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে কাজে লাগানো উচিত। কাজ একলা করা নয়, বরং কাজের লোক তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কোন কাজের বাই প্রডাক্ট তৈরির সম্ভাবনা থাকলে এবং সহজে সেটা বাস্তবায়ন করার সুযোগ থাকলে তা করা যেতে পারে। তবে, সেটা করতে গিয়ে মূল কাজের হ্যাম্পার করা যাবে না বা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা যাবে না। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত উপায়ে কৌশল অবলম্বনের মধ্য দিয়ে বাই প্রডাক্ট সুনিশ্চিত করা যেতে পারে।
দফাভিত্তিক কয়েকটি কাজের সহজ কৌশল
১. দাওয়াত
২. গ্রুপ দাওয়াতি কাজ নিশ্চিত করা। তাহলে একই সাথে দাওয়াত দেয়াও হবে, দায়ীও তৈরি করা যাবে। একসাথে দুই কাজ…।
৩. ব্যক্তিগত দাওয়াতি কাজের জন্য টার্গেট নির্ধারণ করে কাজ করা উচিত। তাহলে আল্লাহ চাহেনতো তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৪. প্রাত্যহিক জীবনের শিডিউলের সাথে মিলিয়ে দাওয়াতি কাজের সিস্টেম দাঁড় করে নেয়া যেতে পারে।
৫. দাওয়াতি চরিত্র অর্জন করলে দাওয়াত বেশি দেয়া সম্ভব।
৬. দাওয়াতি কাজ করতে করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার অবস্থান পরিবর্তন (যেমন কলেজ শেষ করে অন্য কোথাও ভার্সিটিতে ভর্তি হল) করলে সেখানকার ভাইদেরকে তার প্রতি দাওয়াতি কাজের জন্য অনুরোধ করা। তাহলে, এতদিনের কাজ বৃথা যাবে না বরং সাফল্যে রূপান্তর হতে পারে।
সংগঠন
১. প্রোগ্রামসমূহ শিডিউল অনুসারে করা দরকার।
২. সবার যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
৩. সবাইকে টাইমলি উপস্থিত হতে অভ্যস্ত করা উচিত।
৪. প্রোগ্রাম কন্ডাক্ট করার আগে এজেন্ডা নির্ধারণ করে যাওয়া, প্রয়োজনীয় তথ্য কালেকশন করে নেয়া, ড্রাফট চিন্তাভাবনা করে যাওয়া উচিত।
৫. বেশি মানুষের মিটিং হলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বসে ড্রাফট প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে নেয়া যেতে পারে।
৬. অ্যানালাইসিং কোন বিষয় হলে সেটা আগেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে অ্যানালাইসিস করে যাওয়া উচিত। এতে অ্যানালাইসিসটাও ইফেকটিভ হবে আবার সময়ও কম লাগবে।
৭. কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে উদ্বুদ্ধ করা ও চাঙ্গা রাখা। এক হাতের চেয়ে দুই হাত বা দুই হাতের চেয়ে চার হাত বেশি কাজ করতে পারে।
প্রশিক্ষণ
১. নিজের ডেভেলপমেন্টের জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালানো দরকার।
২. আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত দোষের ব্যাপারে তওবাতুন্নাসুহাহ করা এবং দ্বিতীয়বার একই ভুল না করা।
৩. টার্গেট করে করে পরিকল্পিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যেতে পারে।
৪. নফল ইবাদাতের ব্যাপারে পরিকল্পনা করে নেয়া যেতে পারে।
শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমস্যার সমাধান করা
১. শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখার সুযোগ থাকলে তা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে থাকা যেতে পারে।
২. সহযোগিতার মনোভাবাপন্ন হতে হবে।
ক্যারিয়ার সম্পর্কিত
১. ক্লাস মনোযোগের সাথে করা। তাহলে ক্লাসেই পড়ার বা বোঝার প্রাথমিক অংশটুকু হয়ে যাবে। পরে বুঝতে খুব বেশি এক্সট্রা সময় লাগবে না।
২. ক্লাসের পড়া বাসায় রেগুলার পড়ে নেয়া। তাহলে, কম সময়ে পড়া হয়ে যাবে। গোছালো থাকা যাবে।
৩. নিয়মিত ভালোভাবে পড়তে থাকলে শিক্ষকের তত্ত্বাবধান বাড়বে। সেক্ষেত্রে, নিজস্ব প্রেরণাই আপনাকে পড়তে উদ্বুদ্ধ করবে।
৪. পরীক্ষার আগের দিনের জন্য পড়া ফেলে রাখার সুযোগ দায়িত্বশীলের জন্য সমস্যা। কারণ, হঠাৎ করেই ব্যস্ততা চলে আসতে পারে। তাই সুযোগ মত আগে ভাগেই পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখতে পারলে রিস্ক কমবে।
৫. রুটিন মেনে অ্যাকাডেমিক পড়া নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকা দরকার। কোন কারণে একদিন গ্যাপ গেলে যেন সেটা নিয়মিত গ্যাপের কারণ না হয়।
‘মনোযোগ বৃদ্ধি’ সময় ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় হাতিয়ার। যেমনÑ যদি আপনার হাতে দশ দিনের কাজ বাকি থাকে। কিন্তু সময় থাকে পাঁচদিন। তবে, কী করণীয়? জাস্ট মনোযোগ দ্বিগুণ করে দিন, ইফেক্টিভ টাইম দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ আপনার কাজ যথাসময়ে শেষ করতে পারবেন।
টেনশন করা যাবে না, সিনসিয়ার থাকতে হবে। টেনশন করলে আসলে কোন কাজ হয় না। বরং মস্তিষ্কের একটি অংশ টেনশনের কাজে ব্যস্ত থাকে। ফলে আরো কম কাজ করা যায়। তাই, টেনশন না করে সিনসিয়ার থাকতে হবে। সিনসিয়ার থাকার অর্থ হলো, মোট করণীয় কাজের পরিমাণ বুঝে নেয়া, সেটা করার জন্য সময় কত আছে তা জেনে নেয়া এবং সে সময়ের আলোকে কাজ বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করে নিয়ে তা করতে শুরু করা। সকল কাজ আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে করতে হবে। কাজের প্রচেষ্টার পাশাপাশি ফলাফলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে বেশি করে। আল্লাহর কাছে সময় ও কাজের বরকত দানের জন্য দোয়া করা দরকার। আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে আমাদেরকে পথ চলতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কবুল করুন। আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের বেশি বেশি খেদমত করার তৌফিক দিন। আমাদের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করুন। আমাদের জীবনের সকল কাজকে কবুল করে নিন। আমাদেরকে ফাউজুল কাবির তথা আল্টিমেট সাফল্য দান করুন। আমিন।
মন্তব্য