স্বপ্ন বিনির্মাণে ৪২ পেরিয়ে

“ছিঁড়ে ফেলে আজ আয়েশী রাতের মখমল অবসাদ, নতুন পানিতে হাল খুলে দাও হে নাবিক সিন্দাবাদ।”
ফররুখ আহমেদের এই পঙক্তির মাঝে মুসলিমদের নতুনভাবে জেগে ওঠার দীপ্ত আহ্বান আছে, অশান্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে যুগে যুগে আল্লাহ তা’আলা নবী-রাসুল (সা.) পাঠিয়ে মানবজাতিকে জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব দিয়েছেন।

জাহেলিয়াতপূর্ণ সমাজে আলোর মশাল জ্বেলে মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)। পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন এই আলো থাকবে ও বিকিরণ দিবে। খুলাফায়ে রাশেদিনের যুগেই তো শুরু হয়েছিল বাইজান্টাইন, রোম, পারস্য সাম্রারাজ্যের পতনের ইতিহাস।

সেই বিজয়ের ধারা শুরু হয়ে ৭ম শতাব্দীতে স্পেনের সিসিলি বিজয় করে মুসলিমরা ইউরোপের বুকে শিক্ষা-সংস্কৃতির আলো জ্বেলেছে। কুরআন সুন্নাহর আলোকে পথ নির্দেশনা দিয়েছেন, ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোকে জাগিয়েছেন শিক্ষার আলো দিয়ে।

ইতিহাসের পাতায় আজও সেই সাম্রাজ্যের কথা অম্লান হয়ে আছে। এরপর এসেছে উসমানীয় খেলাফত, এই খেলাফত ব্যবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে আলোর কিরণ ছড়িয়েছে। যেখানেই অন্ধকার এসেছে সেখানেই কোনো না কোনো সিন্দাবাদ হাজির হয়েছে সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিকে উদ্ধার করার জন্য। ফররুখ আহমেদ এই সিন্দাবাদদের কথা স্মরণ করেই নতুনভাবে আহ্বান জানিয়েছেন জেগে ওঠার।

মুসলমানদের দীর্ঘ সময় শাসন করার ইতিহাস আজ আমাদের কাছে সোনালী যুগের ইতিহাস হিসেবে পঠিত হচ্ছে। উত্তম শাসনের চিত্র মুসলিমরা দেখিয়েছেন কিন্তু নিজেদের দুর্বলতার কারণে তারা সেই ব্যবস্থা ধরে রাখতে পারেননি। এরপর ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় দু’শ বছর ইংরেজরা শাসন করেছে।

তারা এই অঞ্চলের মানুষদেরকে নানাভাবে শোষণ করার চেষ্টা করেছে। ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের আন্দোলন, বালাকোটের প্রান্তরের সংগ্রাম সবগুলি ঘটনা আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয়। এই আন্দোলনগুলো তখনকার দিনের আলোর মশাল হিসেবে কাজ করেছে।

তুমুল আন্দোলনের মুখে ইংরেজরা এদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। ভারতবর্ষকে ধর্মের ভিত্তিতে দু’ভাগে বিভক্ত করে রেখে যায় ব্রিটিশরা। হিন্দু ধর্মানুসারীদের নিয়ে ভারত আর ইসলাম ধর্মানুসারীদের নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ভুখন্ড নিয়ে ভারত গঠিত হলেও পাকিস্তান গঠিত হয় দু’টি আলাদা ভূখন্ড নিয়ে। দু’টি ভূখন্ডের মধ্যকার দুরত্ব ছিলো প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে পারত প্রকৃত ইসলামী শাসনতন্ত্র।

কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান ইসলামী শাসনব্যবস্থার আলোকে পরিচালিত না হয়ে একদল ক্ষমতালোভী ব্যক্তির শাসনের কবলে পড়ে। জাতীয়তার ধোঁয়া তুলে তারা পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করতে চায়। তৈরী করে একের পর এক ষড়যন্ত্রের কূট-কৌশল। এই হীন কায়েমী শাসনব্যবস্থার প্রতি এদেশের মানুষের আস্থা উঠে যায়। নতুন করে দানা বাঁধতে থাকে মুক্তি সংগ্রামের। যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে। পশ্চিম পাকিস্তানের সকল কূট-কৌশল ধ্বংস করে বীর বাঙ্গালীরা অঙ্কন করে একটি সবুজ ভূখন্ডের মাঝে রক্তের লাল বৃত্তের।

মুক্তির প্রত্যাশায় স্বাধীন বাংলাদেশ গঠিত হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে সৃষ্টি হয় এক নতুন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুঁজি করে ইসলামপন্থী মানুষদেরকে কোনঠাসা করা হয়। এ যেন স্বাধীন থেকেও পরাধীন। শাসন ক্ষমতা দখল নিয়ে চলে শাসকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াই। যার ডাল-পালা ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই অনৈক্যের ফলে সৃষ্টি হয় বিভেদ ও অশান্তির।

এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পায়নি শিক্ষার পবিত্র অঙ্গন ক্যাম্পাসগুলোও। লেজুরবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির কালোছায়া ক্যাম্পাসে সৃষ্টি করে গুম, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধের। পাশাপাশি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ব্যাংক ডাকাতি, অন্যের সম্পদ জবর দখলসহ হীন সব কাজে ব্যবহার করা হয় ছাত্রসমাজকে। অপরদিকে পরিকল্পিতভাবে মাদকের নেশায় বুঁদ করে রাখা হয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের। এমতাবস্থায় নিজেদের ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে নিরীহ ছাত্রসমাজ।

অপসংস্কৃতির সয়লাবে যখন ক্যাম্পাসগুলো ভেসে যাওয়ার উপক্রম, ঠিক সেই মুহূর্তে আলোর মশাল নিয়ে পথহারা ছাত্র-যুবসমাজকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে ৬ জন মেধাবী ছাত্রের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মেধাবী ছাত্ররা দলে দলে ছাত্রশিবিরের পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। খুব দ্রুতই ছাত্রশিবিরের পদচারণা ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়ার প্রতিটি প্রান্তরে। মেধাবী ছাত্রদের এ আদর্শিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি সমাজতন্ত্র-ধর্মনিপেক্ষতার মতবাদে বিশ্বাসী বাতিল শক্তি।

আদর্শিক লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে তারা বেছে নেয় সন্ত্রাসের পথ। ক্যাম্পাসগুলোকে অস্ত্রের গোডাউন বানিয়ে তৈরী করে মিনি ক্যান্টনমেন্ট। মেধাবী ছাত্রদের ইসলামের দিকে অগ্রসর হওয়ার স্রোত থমকে দিতে তারা বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে। কোন বাধাতেই যখন কাজ হচ্ছিল না তখন ভয়ানক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তারা। ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের হত্যার মাধ্যমে এ আদর্শিক যাত্রা রুখে দিতে চেয়েছিল তারা।

যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব ভাইদের রক্তে রঞ্জিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ২৩৪ জন ভাইয়ের শাহাদাত এবং অসংখ্য নেতাকর্মীর পঙ্গুত্ববরণ ও আহত ভাইদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এ কাফেলার অগ্রযাত্রা শিকড় থেকে শিখরে পৌঁছেছে। তাই আজ বাতিলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আল্লাহর রহমতে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সুশৃঙ্খল ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রশিবির জাতিকে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। তাই প্রথম থেকেই ছাত্রশিবির তার প্রতিটি নেতাকর্মীকে সততা, দক্ষতা ও দেশপ্রেমের চেতনা সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ছাত্রশিবিরের এই কল্যাণমুখী কার্যক্রম ছাত্রসমাজ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। এসব নানামুখী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির এগিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এই সংগঠন যেন বর্তমান সময়ের সিন্দাবাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ছাত্রশিবিরের আহবানে পথহারা মেধাবী ছাত্ররা দলে দলে ইসলামের দিকে ধাবিত হয়েছে। ইসলামের সুমহান আদর্শে হেরার আলোয় আলোকিত করতে চেয়েছে তাদের জীবন। এই আলোকিত ছাত্রসমাজ নিয়ে আগামীর সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছে শিবির। আমরা জানি, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আদর্শিক সৎ নেতৃত্ব। কিন্তু কুরআন হাদিসের জ্ঞান ছাড়া সেই কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব তৈরী করা সম্ভব নয়। তাই ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে নিয়মিত কুরআন-হাদীস বিতরণ করে থাকে।

ছাত্রশিবির ছাত্রদেরকে সত্য ও সুন্দরের সহযাত্রী হতে অনুপ্রাণিত করবার জন্য মেধাবী ছাত্রদের সংবর্ধনা, ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে কুইজ, রচনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এর পাশাপাশি কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি ও গরিব মেধাবী ছাত্রদের জন্য স্টাইপেন্ড চালু এবং শিক্ষা উপকরণ বিতরণ শিবিরের নিয়মিত কর্মসূচীর অংশ।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে ছাত্রশিবির শিক্ষা নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পাঠ্যপুস্তকে অনৈসলামিক উপাদান প্রবেশ, দেরিতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, দলীয়করণ, ইতিহাস বিকৃতি ও জাতিকে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ ধোঁয়া তুলে বিভক্ত করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শিবির সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা বরাবরই অবহেলিত। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসার মধ্যে বিরাট ব্যবধান করে রাখা হয়েছে সবসময়। ছাত্রশিবির তার জন্মলগ্ন থেকেই শিক্ষার এ বৈষম্য দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা ছাত্রদের সামনে তুলে ধরায় ১৯৬৯ সালের ১৫ আগষ্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শহীদ আব্দুল মালেককে। আব্দুল মালেক ভাইয়ের সে আত্মত্যাগের ঘটনাকে স্মরণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার দাবিতে ১৫ আগস্টকে ‘ইসলামী শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

ইসলামী ছাত্রশিবির বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ও সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে সবসময়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত নিধন কর্মসূচী, ফিলিস্তিনে মুসলমানদের পবিত্র স্থান নিয়ে ষড়যন্ত্র, মিসরে বৈধ সরকারকে উৎখাত করতে গিয়ে পরিচালিত গণহত্যা, কাশ্মীরে মুসলমানদের পরাধীন করে রাখা, ইরাক-আফগানিস্থানে পরিচালিত গণহত্যাসহ সারাবিশ্বে যখনই অন্যায় অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে তখনই তীব্র প্রতিবাদে মুখর হয়েছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

জাতীয় বিষয়ে যখন মহাসঙ্কট দেখা দিয়েছে তখন নানা ইস্যু নিয়ে রাজপথে এসে সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে সংশোধিত হওয়ার দাবি জানিয়েছে এ কাফেলা। ইসলামকে নিয়ে কটূক্তি করা, ধর্মীয় বিষয়ে আঘাত হেনে কোন কথা বলা, ধর্মীয় বিষয়কে হেয় প্রতিপন্ন করে নাস্তিক মুরতাদদের হোলি খেলার বিপক্ষে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য টিপাইমুখ বাঁধ, ফারাক্কা বাঁধ ইত্যাদি ইস্যু নিয়েও জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে দেশের সরকার যখন স্বাধীনতা হরণকারী ‘ট্রানজিট’ সুবিধা দিয়েছে তখনও প্রতিবাদ করেছে ছাত্রশিবির। বিশেষ করে জাতির ক্রান্তিলগ্নে সকল স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিকা ছিলো সোচ্চার।

ছাত্রশিবির সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর নকল, মাদক ও ইভটিজিং বিরোধী প্রচারণা করে থাকে। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ব্লাড ডোনেশন, ব্লাড গ্রুপিং, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন করে থাকে। সমাজের অবহেলিত পথশিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এ সংগঠন। এছাড়াও পথশিশুদের মাঝে ঈদের পোষাক বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, খাবার বিতরণ করে থাকে শিবির। পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, উন্মুক্ত জলাশয় ও নদী-নালায় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা সমগ্র দেশবাসীর কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

ইসলামী ছাত্রশিবির ৪২ বছর ধরে স্বাধীন বাংলাদেশে পথহারা ছাত্রদের মুক্তির ঠিকানা হয়ে এবং দেশরক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- “তোমরা ভারি বা হালকা অবস্থায় বের হয়ে যাও”। আল্লাহ তা’আলার এই নির্দেশের জন্যই সকল বাধার প্রাচীর টপকে এই আন্দোলনের কর্মীরা এগিয়ে যাচ্ছে।

এখই সময় এগিয়ে যাওয়ার, এখনই সময় নতুন বাংলাদেশ গড়ার। মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা যদি এগিয়ে যেতে পারি তাহলে বিজয় আমাদের হবেই ইনশাল্লাহ। আল্লাহ তায়া’লা সূরা ফুসসিলাতের ৩০ নম্বর আয়াতে বলেছেন “নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমন করে এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।”

আমাদের কাজ হল নিজেদের ঈমানকে আব্দুল্লাহ জুলবাজাদাইন (রাঃ) এর মত শক্তিশালী করা, হযরত আলী (রাঃ) এর মত সাহসী হওয়া, দানশীলতার ব্যাপারে হযরত ওসমান (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) এর মত হওয়া, বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর মত হওয়া, দৃঢ়তার ব্যপারে খুবাইব (রাঃ) এর মত হওয়া। সাহাবীদের সেই উত্তম চরিত্র যদি নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি তাহলে সকল বাধা উপেক্ষা করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো ইনশাল্লাহ।

আমাদের স্বপ্ন এমন বাংলাদেশ যার সবুজ আঙিনায় নিশ্চিন্তে খেলা করবে আগামীর প্রজন্ম। আমাদের স্বপ্ন এমন এক বাংলাদেশ যা কখনো জরাগ্রস্থ হবেনা। আমাদের স্বপ্ন এমন এক বাংলাদেশের যার প্রতি ইঞ্চি জমিনে প্রতিনিয়ত ঘোষিত হবে আল্লাহু আকবার ধ্বনি।

আমাদের স্বপ্ন এমন এক বাংলাদেশের- যেখানে সাম্য, শান্তি, ন্যায় ও শুভবোধের মধ্য দিয়ে অবারিতভাবে ঝরবে মহান রবের অবিরত রহমধারা। মহান আল্লাহ ছাত্রশিবিরের এ স্বপ্ন -পথচলাকে কবুল করুন। ছাত্রশিবির যেন মঞ্জিলে মকসুদের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, আল্লাহর নিকট সে তাওফিক কামনা করছি।

মন্তব্য