মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকে, তার আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে। আর এই আত্মবিশ্বাসের অভাব তার অতীতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। হ্যাঁ, বিপরীতপক্ষে ভালো অতীত মানুষকে আত্মবিশ্বাসীও হতে শেখায়। কিন্তু কেউ যদি কোনো কারণে ভালো অতীতের অধিকারী না হয়, তাঁকে কি আর আত্মবিশ্বাস ধারণ করতে নেই! সে জায়গা থেকেই আমি সাধারণত উদ্বুদ্ধমূলক বক্তব্য দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদেরকে বলি, "তোমাকে ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতায় আরো ভালো করতে হবে। তোমার অতীতের ভালো ফলাফল এটা প্রমাণ করে যে, তুমি পারো এবং পারবে ইনশা-আল্লাহ"। একইসাথে আমি এই কথাও বলি যে, "যারা ইতোপূর্বে ভালো করতে পারোনি, তাদের অতীত যদি তাদের পিছে টেনে ধরতে চায়, তবে ভুলে যাও তোমার অতীত; মনে করো এই তোমার শুরু হচ্ছে, তোমার কোনো অতীত নেই। তোমাকে ভালো করার জন্যই এবারে পথ চলতে হবে"।
আমি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনেছি, সেখানে কোনো ছাত্র ভর্তি হওয়ার জন্য পৌঁছে গেলে তাঁকে ফেরানো হয় না। ভর্তি করা হয়ই। আসন সংখ্যাও নাকি নির্দিষ্ট নয়। আমি শুনে খুবই আশ্চর্য হয়ে যিনি আমাকে এই তথ্যটি দিলেন, আল-আযহারের সেই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করলাম, এমনটা কেন? তিনি বললেন, সেখানের কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে যে প্রতিটি আগ্রহী শিক্ষার্থীরই অধিকার আছে শেখার। তাই আগ্রহভরে কেউ আসলে তাঁকে জ্ঞানার্জন থেকে পিছে ঠেলে দেওয়া ঠিক নয়। আহ, কী অসাধারণ মহানত্ব! এজন্যই সেখানের শিক্ষার্থীরা এমন স্কলার হন।
আমাদের দেশে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উচ্চ মার্গীয় মনে করা হয় আর কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভুল করে অউচ্চ মার্গীয় তথা নিম্ন মার্গীয় মনে করা হয়। ফলে সে তথাকথিত নিম্নমার্গীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখা ভুলে যায়। স্বপ্ন দেখলেও ছোট করে দেখে। যেন ছোট স্বপ্নই তাদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু এমনটা না হয়ে সেখানের শিক্ষার্থীদেরও যদি বড় করেই আত্মবিশ্বাস গঠনে উদ্বুদ্ধ করা হতো, সাহস দেওয়া হতো, যত্ন নেওয়া হতো, সেখানেও অসাধারণ সুরভী ছড়ানো ফুলের সুবাসে সমাজ মেতে উঠতো। এবং সে সুযোগ এখনও আছে।
সারাদেশে উচ্চশিক্ষার যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সব জায়গাতেই কি আত্মবিশ্বাস তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় না? তাহলে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা পটেনশিয়ালিটির উৎকর্ষ সাধন করে গড়ে উঠতে পারতো আর দেশের প্রতিটি প্রান্তে গ্রামে গঞ্জে যোগ্যতার আলো ছড়িয়ে একসাথে দেশটাকে এগিয়ে নিতে পারতো। জাতীয় সে পলিসি প্রণয়নে আমাদের এগিয়ে আসা অতীব জরুরি। ফুলদানীতে ফুল দেখে আনন্দিত হওয়ার সময় কেউ প্রশ্ন করে না, ফুলটা কি বাগানে হয়েছিলো, নাকি পথের ধারে। সুষমাই ফুলকে ভালোবাসায় ভরপুর করে তোলে। ভালোবাসি সকল ফুলকে, প্রতিটি ফুল স্বরূপ শিক্ষার্থীকে। এরাই আগামীর বাংলাদেশ, আগামীর পৃথিবী।
মন্তব্য